অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম গুলো কি আপনার জানা আছে? যদি আপনি এই বিষয়ে অবগত না থাকেন বা জানা না থাকে তাহলে এই পোস্ট টি আপনার জন্য।
আপনি যদি অলিভ অয়েল ব্যবহার করে না থাকেন বা করে থাকলেও শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে থাকেন। তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম - অলিভ অয়েল তেল কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
- অলিভ অয়েল কি?
- অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
- রান্নায় অলিভ অয়েল তেলের ব্যবহার
- চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
- চুলে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
- বাচ্চাদের অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম ও উপকার
- রাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
- মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের অপকারিতা
- ত্বকে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
- শেষকথা
অলিভ অয়েল কি?
অলিভ অয়েলের ব্যবহার বা শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম জানতে হলে সবার আগে জানতে হবে এই অলিভ অয়েল কি? অলিভ (Olive) এর অর্থ হলো জলপাই। আর অয়েল (Oil) এর অর্থ তেল। অর্থাৎ জলপাই এর তেল বা জলপাই থেকে পাওয়া তেলকেই মূলত অলিভ অয়েল বলা হয়। এটিকে জয়তুনের তেল ও বলা হয়ে থাকে।
বলা হয় যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হলো জয়তুনের পাতা। আর মানুষের শরীরের শান্তির দূত হলো এই জয়তুনের তেল। যেটাই আমরা অলিভ অয়েল হিসেবে চিনি। এটিকে আরবিতে জয়তুন (زيت الزيتون) বলা হয়। এই অলিভ অয়েল কে Liquid Gold বা তরল সোনা নামেও ডাকা হয়ে থাকে। আর এই অলভ অয়েল গ্রীক (Greek) সভ্যতা থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা ও রান্নার কাজে।
এই অলিভ অয়েল কয়েক রকমের হয়ে থাকে। এর প্রকারভেদ হলো ৩ টি। বাজারে এই ৩ ধরনের অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। সেগুলো হলোঃ
- এক্সট্রা ভার্জিন - Extra Virgin (এটি অলিভ অয়েল এর প্রথম ধাপ)
- ভার্জিন - Virgin (এটি ভার্জিন অলিভ অয়েল এর পরের ধাপ)
- রিফাইন্ড - Refined বা Refine Pure (এটি অলিভ অয়েল এর তৃতীয় ধাপ)
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করার অনেক নিয়ম বা মাধ্যম রয়েছে। আমরা অনেক ভাবে এই তেল ব্যবহার করতে পারি। এই তেল সচারচার ব্যবহার করা হয় না বা কেও ব্যবহার করে না। কিন্তু এর অনেক উপকারিতা ও গুনাগুন রয়েছে। আমাদের সেগুলো জানা থাকলে আমরাও এর যথাযথ ব্যবহার করতে পারবো।
এই অলিভ অয়েল তেল আমরা বিশেষ করে শরীরে ম্যাসাজ বা স্কিন কেয়ার, খালি মুখে খাওয়া বা রান্নার সাথে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই অলিভ অয়েল তেল আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন জায়গায় রান্নাতে খুব কম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মানে রান্নায় এর ব্যবহার নাই বললেই চলে। এটি মূলত শরীরে বা ত্বকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অলিভ অয়েলের ব্যবহার যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি এর ব্যবহারের নিয়ম ও রয়েছে। আমদের এই নিয়ম গুলো জানতে হবে। শুধু জানলে হবে না, এর নিয়ম জেনে অবশ্যই মানতেও হবে। কারন এই অলিভ অয়েল কে যেমন আমাদের শরীরের শান্তির দূত বলা হয়েছে এবং আমাদের ইসলাম ধর্মেও এর কথা বলা আছে, তার মানে এর বিশেষত্ব অনেক।
রান্নায় অলিভ অয়েল তেলের ব্যবহার
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম গুলোর মধ্যে রয়েছে রান্নায় এর ব্যবহার। আমরা জেনে আসলাম যে রান্নায় এই অলিভ অয়েল খুব একটা ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু এর ব্যবহার খুব বেশি না হলেও এর ব্যবহার আমাদের জানতে হবে। আর জেনে তা আমাদের বাস্তবায়ন করে দেখতে হবে। তারপর আমাদের উপকারে আসলে তা প্রতিনিয়ত ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
সালাদ ড্রেসিং: এই অলিভ অয়েল রান্নার কজে বা খাওয়ার জন্য ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম হলো সালাদে। অলিভ অয়েল সালাদ ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি সরাসরি সালাদের ওপর ঢালুন। এছাড়া লেবুর রস, ভিনেগার এবং অন্যান্য মসলার সাথে মিশিয়ে তারপর সালাদে ব্যবহার করুন।
বেকিং ও ভাজা: অলিভ অয়েল রান্নায় ভাজা খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। তবে এই তেল সোনালি রঙ আসা পর্যন্ত মাঝারি তাপে রান্নার জন্য ভালো। উচ্চ তাপে রান্না করার সময় অলিভ অয়েল তার গুণাগুণ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই এটি সাধারণত ফ্রাইং বা উচ্চ তাপের রান্নায় ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত নয়। হালকাভাবে যেকোনো খাবার ভাজার জন্য এই তেল ব্যবহার করা যায়।
চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
১। চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করার প্রস্তুতি:
- চুল ধোয়ার পূর্বে: চুল ধোয়ার আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। কারন এটি চুলের প্রান্তে বা আগাই ব্যবহারের মাধ্যমে শুষ্কতা ও ফ্রিজ বন্ধ করতে অর্থাৎ চুলের ভঙ্গুর কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- পরিমাণ: এর পরিমাণ সবার ক্ষেত্রে এক না। ছেলেদের জন্য কম এবং মেয়েদের জন্য অবশ্যই বেশি করে ব্যবহার করতে হবে। চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্ব অনুসারে অলিভ অয়েলের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত এরর পরিমাণ ২-৪ চা চামচই যথেষ্ট হবে।
২। অলিভ অয়েল ব্যবহারের পদ্ধতি:
- ম্যাসাজ: এটি হালকা গরম করতে পারেন (মাইক্রোওয়েভে ১০-১৫ সেকেন্ড) অথবা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ব্যবহার করা যায়। এরপর আপনার আঙুলের ডগা দিয়ে অলিভ অয়েল চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং ত্বককে হাইড্রেট করতে সহায়তা করবে।
- কম্বিনেশন: এটিকে মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়। আপনি অলিভ অয়েলকে অন্যান্য তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। যেমনঃ নারকেল তেল, আমন্ড তেল বা আর্গান তেল।
আরও পড়ুনঃ চোখ উঠলে করনীয় কি?
৩। অলিভ অয়েল লাগানোর পর:
- ডাম্প চুলে লাগান: চুলের গোড়া পর্যন্ত অলিভ অয়েল তেল লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। তারপর একটি স্নান ক্যাপ অথবা গরম তোয়াল দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। এর ফলে তেলের পুষ্টিগুণ গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।
- সময়: চুলে অলিভ অয়েল রাখুন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা মত। বেশি সময় ধরে রাখলেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে ১ ঘণ্টার বেশি রাখলে তেল ভালোভাবে ধোয়া বা পরিষ্কার করা একটু কঠিন হতে পারে।
৪। ধোয়া বা পরিষ্কার করা:
- হালকা শ্যাম্পু দিয়ে: তেল ধোয়ার জন্য হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রথমে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভিজিয়ে তেল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। তারপর আরো একটি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- ভিনেগার দিয়ে: কিছু মানুষের জন্য চুল পরিষ্কার করতে ভিনেগার সাহায্য করতে পারে। শ্যাম্পু করার পর এক কাপ মতো পানি এবং ২ চা চামচ ভিনেগার দিয়ে মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
আমাদের চুলের জন্য এই অলভ অয়েল অনেক উপকারে আসতে পারে। তবে তা নিয়ম মেনে করতে হবে। কারন কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। তাই চুলের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য সপ্তাহে এক বা দুই বার অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। আর নিয়ম মেনে এ করলে আপনার চুল হয়ে উঠবে আরো স্বাস্থ্যবান, নরম ও মসৃণ।
চুলে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
অলিভ অয়েল তেল কিভাবে ব্যবহার করতে হয়? বা চুলে এর ব্যবহার কিভাবে করবেন বা নিয়ম সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। কিন্তু এই অলিভ অয়েল চুলে ব্যবহারর করলে যে উপকারিতা রয়েছে আমরা ভালোভাবে জানতে পারিনি। চুলে এটি ব্যবহার করলে অবশ্যই এর উপকার জানতে হবে। নিচে চুলে অলিভভ অয়েল তেল ব্যবহারের উপকারিত দেওয়া হলোঃ
- শুষ্কতা কমাতে: অলিভ অয়েল চুলকে গভীরভাবে আর্দ্রতা প্রদান করে থাকে। যা শুষ্ক চুল ও চুলের প্রান্তের ফাটল কমাতে সাহায্য করে।
- নরম এবং মসৃণ করতে: এটি চুলকে নরম ও মসৃণ করে তোলে। যার ফলে চুল সহজে ঝরঝরে ও সজাগ দেখায়।
- প্রাকৃতিক ঝলক: অলিভ অয়েল চুলে প্রাকৃতিক শাইন বা উজ্জ্বলতা আনে। যা চুলকে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যবান দেখায়।
- ভিটামিন সমৃদ্ধ: অলিভ অয়েল ভিটামিন E ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং চুলের দুর্বলতা কমাতে সহায়ক।
- গোড়ার স্বাস্থ্য: স্ক্যাল্পে বা চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
- ফ্রিজ কন্ট্রোল: অলিভ অয়েল চুলের ফ্রিজ এবং উড়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে। যা চুলকে সোজা ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে সাহায্য করে।
- দূর্বল চুলের সমস্যা সমাধান: এটি চুলের প্রান্তে বা আগাতে ম্যাসাজ করলে চুলের দুর্বলতা এবং ভাঙ্গা কমায়।
- খুশকি কমায়: অলিভ অয়েল স্ক্যাল্পে অর্থাৎ গোড়ায় ম্যাসাজ করলে ড্যান্ড্রাফ কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি স্ক্যাল্পকে হাইড্রেট করে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে থাকে।
- চুলের বৃদ্ধিতে: অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে নতুন চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হতে পারে।
- কন্ডিশনার হিসেবে: অলিভ অয়েল একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। যা চুলকে সিল্কি ও মসৃণ করে এবং চুলের ভিতরে পুষ্টি প্রদান করে।
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে তা ব্যবহার করে আমাদের অলিভ অয়েলের সকল গুনগত উপকার গুলো কাজে লাগাতে হবে। এটি চুলের জন্য অধিকতর উপকারী। এই উপকারিতাগুলি চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া নিয়মিত এই তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল হবে আরও শক্তিশালী, স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর।
বাচ্চাদের অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম ও উপকার
শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম গুলো আমরা বাচ্চাদের জন্য তা ব্যবহার করতে পারি। অলিভ অয়েলের ব্যবহার বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী। আমরা অনেকে সেটা জানিনা। আর এটি বাচ্চাদের জন্য উপকারী তা জানা থাকলেও এর ব্যবহারের সঠিক নিয়মগুলো জানি না। বাচ্চাদের জন্য এর উপকার গুলোও আমাদের অনেকের অজানা থাকতে পারে। তো চলুন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ব্যবহারের নিয়মঃ
- ত্বক পরিচর্যা: বাচ্চাদের ত্বক স্নিগ্ধ ও মসৃণ রাখতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। অলিভ অয়েল গরম করে নিতে হবে না। এটি সাধারণ তাপমাত্রায় ব্যবহার করা ভালো। ত্বকে লাগানোর আগে হাতে কিছুটা তেল নিয়ে ভালোভাবে ঘষে তেলটি হালকা গরম করে নিতে হবে। যেহেতু বাচ্চাদের ত্বক কোমল হয়, তাই অল্প পরিমাণ তেল ব্যবহার করতে হবে। তেল লাগানোর পর কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপর উষ্ণ পানি দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বাড়িতে বসে ব্যবসার আইডিয়া
- শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যবহার: যদি বাচ্চার পা বা শরীরের অন্যান্য অংশে ডায়পার রাশ হয়, তাহলে সেই জায়গায় অলিভ অয়েল লাগাতে পারেন। এটি ত্বককে মসৃণ করে এবং রেশমি অনুভূতি দিয়ে থাকে। নতুন কোনো তেল ব্যবহার করার আগে শরীরের অল্প জায়গায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবে যে ত্বকে কোনো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিনা। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর যেহেতু চুলের উপকারিতা অনেক তাই বাচ্চাদেরর চুলে ব্যবহার করা ভালো।
উপকারঃ
- অলিভ অয়েল ত্বককে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে থাকে। যা বাচ্চাদের ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে সহায়তা করে। ত্বকে বা শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে এই উপকার পাওয়া যাবে।
- অলিভ অয়েল চুলে প্রাকৃতিক শাইন আনে। এটি স্ক্যাল্পের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলের বৃদ্ধি উন্নত ও ঘন করতে সহায়ক হতে পারে।
- অলিভ অয়েল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণাবলী রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায়। যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বাচ্চাদের ত্বককে পরিবেশগত ক্ষতিকর উপাদান থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
রাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
অলিভ অয়েলের ব্যবহার এর অন্যতম হলো রাতের বেলা মুখে ব্যবহার করা। কারন মুখে এর ব্যবহারের বিশেষ উপকার রয়েছে। আমরা উপরে অলিভ অয়েল তেলের বিভিন্ন রকমের ব্যবহার সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু এখন আমরা এই অলিইভ অয়েল তেলের রাতের বেলা মুখে ব্যবহার কিভাবে করবো বা ব্যবহারের নিয়ম-কানুন গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। নিম্নে এর আলোচনা করা হলোঃ
১ম ধাপঃ প্রথমে আপনার মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। তবে মুখে মেকআপ বা ময়লা না থাকলে ভালো হয়। তারপর পরিষ্কার হাতে বা কটন প্যাডে কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল নিন। এরপর অলিভ অয়েলটি মুখে নিন এবং আঙ্গুলের ডগা দিয়ে সোজা, উপরের দিকে টান টান করে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত চলাচল উন্নত হবে এবং ত্বক ভালোভাবে আর্দ্র হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ শারীরিক ফিটনেস ঠিক রাখতে করনীয়
২য় ধাপঃ একবার ম্যাসাজ করার পর অলিভ অয়েলটি কিছুক্ষণ মুখে থাকতে দিন। এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে কাজ করা শুরু করবে। তার পর আপনি আপনার মতো করে ঘুমিয়ে যাবেন। দিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, আপনার মুখ থেকে অয়েলটি মাইল্ড ফেস ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এছাড়া আপনি চাইলে গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন।
কিন্তু অলিভ অয়েল ব্যবহার করার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে এটি গুণগত, মানসম্পন্ন এবং তাজা। এভাবে আপনি যদি নিয়মিত রাতে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ত্বক মসৃণ ও কোমল হতে পারে। এটি আপনি নিজে ব্যবহার করার পর নিজেই এর ফল দেখতে পাবেন।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের অপকারিতা
অলিভ অয়েল তেল কিভাবে ব্যবহার করতে হয়? এটি অনেকে জানতে চাই। কিন্তু এটি জানার আগে বা জানা থাকেলেও আমাদের জানতে হবে এর অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে কি না। যেহেতু এটি মুখে ব্যবহারের অনেক উপকারিতা রয়েছে বা মুখে বেশিরভাগ মানুষ মুখে ব্যবহার করে থাকে। তাই মুখে ব্যবহারের অপকারিতা জানতে হবে। কয়েকটি অপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
- অতিরিক্ত তেলাক্ততা: অলিভ অয়েল ত্বকে অনেকটা তেল যুক্ত করতে পারে। যা কিছু মানুষের ত্বকে অতিরিক্ত তেলাক্ততা ও ব্রণ এর প্রভাব দেখা দিতে পারে।
- ব্রণ বা অ্যালার্জিক সমস্যা: অলিভ অয়েল কিছু মানুষের ত্বকে ব্রণ বা অ্যাকনির সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার ত্বক তেলতেলে বা ব্রণ প্রবণ হয়ে থাকে। তাহলে এই অলিভ অয়েল ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি কারো ক্ষেত্রে এই তেল সংবেদনশীল হতে পারে। ফলে অ্যালার্জি বা র্যাশ হতে পারে।
- ছিদ্র বন্ধ হওয়া: অলিভ অয়েল গাঢ় এবং ভারী হয়ে থাকে। যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে ত্বকের শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে না। যাদের মুখে স্পট রয়েছে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
- মেকআপ অপসারণে অক্ষমতা: অলিভ অয়েল মেকআপ অপসারণে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু কিছু শক্তিশালী বা জল-প্রতিরোধী মেকআপের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণভাবে মেকআপ সরাতে সক্ষম নাও হতে পারে। তাই ব্যবহারের সময় মুখ অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।
- গরম আবহাওয়ায় অস্বস্তি: গরম আবহাওয়ায় মুখে অতিরিক্ত তেল লাগানো অস্বস্তিকর হতে পারে। ফলে মুখ আরও তেলতেলে মনে হবে। এটি মূলত শীতকাল বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ব্যবহারে বেশি উপযোগী।
ত্বকে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর উপকার সম্পর্কে আমরা অনেক জানলাম। যেহেতু এই অলিভ অয়েল তেল আমরা রান্না বা অন্যান্য কাজের থেকে ত্বকে বা শরীরে ব্যবহার করে থাকি বা শরীরে ব্যবহারের গুঙ্গত মান অনেক। তাই আমরা কেন ত্বকে এটি ব্যবহার করবো বা এর উপকারিতা কি তা জানতে হবে। তো চলুন ত্বকে এর উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. ত্বককে আর্দ্র ও বয়সের ছাপ রোধেঃ অলিভ অয়েল ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং গভীরভাবে আর্দ্রতা দিয়ে থাকে। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি ত্বকের আর্দ্রতা লক করতে সাহায্য করে। যা ত্বককে নরম এবং মসৃণ রাখে। এমনকি এতে থাকা ভিটামিন এবং পলিফেনল বয়সের পরিবর্তন রোধ করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
২. মলমের কাজ এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নতিঃ অলিভ অয়েল ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে। এটি বিশেষভাবে সোরিয়াসিস এবং একজিমার মতো ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যার সমাধানে সহায় হতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে অলিভ অয়েল ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে সহায়ক। ত্বককে আরও কোমল এবং উজ্জ্বল করে তোলে। এটি ত্বকের কুঁচকানো বা বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
৩. ত্বকের পোরস পরিষ্কারক ও স্বাভাবিক সানস্ক্রীনঃ অলিভ অয়েল তেল ত্বকের পোরস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যা ত্বকের আভা উন্নত করতে সহায়ক। এটি ত্বকের গাঢ় দাগ এবং ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল কিছু অবস্থায় সানস্ক্রীন হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক UV রশ্মির বিরুদ্ধে কিছু সুরক্ষা প্রদান করে। যদিও এটি সম্পূর্ণ সানস্ক্রীন প্রতিস্থাপন হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪. অ্যান্টি-এজিং ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যঃ অলিভ অয়েল ত্বকের বয়সের পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এটি কোলাজেন উৎপাদন উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে। যা ত্বককে টান টান এবং তরুণ রাখে। এছাড়া অলিভ অয়েল তেলে কিছু পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। যা ত্বকের সংক্রমণ কমাতে সহয়তা করতে পারে।
শেষকথা
শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের পোস্ট টি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি অলিভ অয়েল তেলের উপকারগুলো ভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে উপরের নিয়মগুলো মেনে ব্যবহার করতে হবে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি এরকম গুরুত্বপূর্ণ, ইনফরমেটিভ এবং স্বাস্থ্যমূলক বিষয় জানতে আগ্রোহী হয়ে থাকেন তাহলে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করতে পারেন। আপনার সুস্থ্যতা কামনে করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, ধন্যবাদ।
এম এম আই ২২ আইটি ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url