শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল

 

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল কি? আমরা অনেকে শারীরিক দুশ্চিন্তাই ভোগী। আমাদের শারীরিক ফিটনেস কিভাবে বজায় রাখবো, প্রয়োজনীয়তা এবং কি কি করা লাগবে তাই নিয়ে আজকের পোস্ট। 

সুস্বাস্থ্যই হলো আমাদের জীবনের সকল সুখের মূল। আর তাই আমাদের শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা খুবই জরুরী। এজন্য আমাদের সঠিক নিয়ম ও পথ অবলম্বন করতে হবে। আর এসব করতে আমাদের কি করনীয় চলুন তা জেনে নেওয়া যাক। 

পোস্ট সুচিপত্রঃ শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে যা যা করবেন 

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল

আমাদের শরীরের সুস্থতাই আসল সুখ। আমাদের শরীরে যদি অসুস্থতা থাকে তাহলে আমাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। কোনো কাজের প্রতি চেষ্টা থাকলেও তা আমরা করতে পারি না। এর কারন আমরা তখন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকি। আর সেই কারনে আমরা অনেক দুর্বল হয়ে থাকি এবং শরীরে কোনো এনার্জি থাকে না।  

আমাদের শরীর কে অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই আমাদেরর শারীরিক ফিটনেস বজাই রাখা জরুরী। আমাদের শরীরের শারীরিক ফিটনেস এর জন্য অনেক পথ ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। আর সেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত মানতে পারলেই আমরা আমাদের শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে পারবো।

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল এর মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা। যা শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং শক্তি বাড়ায়। এছাড়া সুষম খাদ্যাভ্যাস মানতে হবে। যাতে যেখানে প্রোটিন, শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত পরিমান পানি অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেগুলো শরীরের সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করে।

শারীরিক ফিটনেস রাখা কেন প্রয়োজন? 

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনমানকে উন্নত ও সহজ করার জন্য আমাদের শারীরিক ফিটনেস ঠিক রাখার কোনো বিকল্প নেই। কারন এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহয়তা করে। এমনকি শারীরিক ফিটনেস আমাদের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো বড় রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য পারলে এটি আমাদের শরীরে শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায়। যার ফলে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পেয়ে থাকি। এটি অনেক ধরনের উপকার নিয়ে আসে। এখানে কয়েকটি মূল কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নতি: নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ানো যায়, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য, পেশি শক্তি এবং আমাদের ফ্লেক্সিবিলিটি উন্নত করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: শারীরিক ফিটনেস রুটিন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা সহজ হয়।
  • শক্তি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: নিয়মিত ব্যায়াম করলে দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এবং উৎসাহ বৃদ্ধি পায়।
  • হাড় ও জয়েন্ট স্বাস্থ্য: শক্তিশালী হাড় এবং জয়েন্ট স্বাস্থ্য বজায় রাখতে শারীরিক ফিটনেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং জয়েন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।
শারীরিক ফিটনেস হলো এমন একটি অবস্থার নাম যেখানে শরীরের সমস্ত সিস্টেম সুস্থ ও কার্যকরী থাকে। শারীরিক ফিটনেস বা সুস্বাস্থ্যতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া এবং সৃষ্টিকর্তার দেওয়া উত্ততম নিয়ামত। তাই সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখার উপায় আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরী।

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য করনীয়

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আর সেগুলো আমাদের জীবনের শেষ পর্যন্ত মানা উচিৎ। যা খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা বিষয়। কিন্তু এগুলো আসতে আসতে অভ্যাস করে ফেললে অনেক সহজ হয়েও যাবে। এখানে কিছু মৌলিক করণীয় উল্লেখ করা হলো:

  • নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ভালোভাবে ব্যায়াম করা প্রয়োজন। যা আমাদের ডেইলি রুটিনের সাথে করা দরকার। 

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাবার খান, যেমন তাজা ফলমূল, শাক-সবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (মাংস, মাছ, ডাল) এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (বাদাম, ভাত)।

  • পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করে।

  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান, যা শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ বাড়িতে বসে ছোট ব্যবসার আইডিয়া

  • শারীরিক কার্যক্রম: দৈনন্দিন জীবনে বেশি শারীরিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা, হাঁটা বা সাইকেল চালানো।

  • শারীরিক কার্যক্রম: দৈনন্দিন জীবনে বেশি শারীরিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা, হাঁটা বা সাইকেল চালানো। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনো কিছু অতিরিক্ত করা শরীরের জন্য ভালো না। 

  • স্বাস্থ্যপরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং আপনার শরীরের পরিবর্তনগুলোর প্রতি সতর্ক থাকুন। হঠাৎ করে কোনো কিছু বেশি হয়ে গেলে বা ভুল করলে যদি আপনার বিশেষ কোনো সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের  সাথে পরামর্শ করতে হবে। 

এই অভ্যাসগুলি নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য সহজ হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত হবে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও আমাদের অনেক নিয়মকানুন রয়েছে শারীরিক ফিটনেস বজাই রাখার জন্য। 

নিয়মিত ব্যায়াম করা

শারীরিক ফিটনেস এর জন্য ব্যায়াম হলো এক অন্যতম বিশেষ মাধ্যম। এটি করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করার প্রয়োজন হয়। যা শরীরের বিভিন্ন অংশকে লক্ষ্য করে এবং কার্যকরভাবে স্বাস্থ্য উন্নত করে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম এবং এগুলো কিভাবে করা উচিত তা বর্ণনা করা হলো:

১. কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ
  • ব্যায়াম: দৌড়ানো, হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা যেকোনো খেলাধূলা। 
  • কখন: সপ্তাহে ৩-৫ দিন।
  • কিভাবে: প্রতি সেশনে (আপনি যেদিন বা যে সময়ে) ৩০-৪৫ মিনিট কার্ডিও এক্সারসাইজ করুন। ধীরে ধীরে গতি ও সময় বাড়ান।
২. স্ট্রেন্থ ট্রেনিং
  • ব্যায়াম: ভারী কিছু উত্তোলন (ডাম্বেল, বারবেল, চাইলে ইটের সহায়তা নিতে পারেন), শরীরের ওজন ব্যবহার করা (পুশ-আপ, সিট-আপ)
  • কখন: সপ্তাহে ২-৩ দিন।
  • কিভাবে: প্রতি সেশনে বিভিন্ন পেশির ওপর ভিত্তি করে কাজ করুন। প্রতিটি ব্যায়ামের ৮-১২ রেপিটিশন এবং ৩-৪ সেট করুন।
৩. ফ্লেক্সিবিলিটি এবং স্ট্রেচিং
  • ব্যায়াম: যোগা(Yoga), পাইলেটস, স্ট্রেচিং। এগুলোর প্র্যাক্টিকাল আপনি নিজে একটু দেখে নিবেন। 
  • কখন: সপ্তাহে ২-৩ দিন, বিশেষ করে ব্যায়ামের পরে।
  • কিভাবে: প্রতিটি স্ট্রেচ ১৫-৩০ সেকেন্ড ধরে ধরে রাখুন।

আরও পাড়ুনঃ নিমপাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানুন

৪. রিকভারি এবং বিশ্রাম
  • ব্যায়াম: স্ট্রেচিং বা হালকা হাঁটা।
  • কখন: ব্যায়ামের পর এবং সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিশ্রাম দিন।
  • কিভাবে: হালকা ব্যায়াম করুন এবং প্রয়োজন হলে পুনরায় শুরু করার জন্য একটু বিশ্রাম নিন।
টিপস: 
  • ওয়ার্ম-আপ: ব্যায়াম শুরু করার আগে ৫-১০ মিনিট ওয়ার্ম-আপ করুন। যাতে পেশীগুলি প্রস্তুত থাকে এবং শরীর হালকা গরম হয়ে যায়। 
  • কুল-ডাউন: ব্যায়াম শেষ করার পর ৫-১০ মিনিট কুল-ডাউন করুন এবং স্ট্রেচ করুন। যাতে পেশী শিথিল থাকে।
  • বিভাগ করা: শারীরিক ফিটনেসের জন্য ব্যায়ামগুলো বিভিন্ন দিন ভাগ করে করুন, যেমন এক দিন কার্ডিও, এক দিন স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এভাবে। 

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল এর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা। আমরা প্রতিদিন নিয়মিত ৩ বেলা খাওয়া-দাওয়া করে থাকি। আর না করে থাকলে অবশ্যই তা চেষ্টা করবো। আর সেটা হতে হবে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার। শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে সঠিক খাবার নির্বাচন এবং সঠিক সময় খাদ্য খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু প্রধান খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ 
১. প্রোটিন
মুরগির মাংস, মাছ, ডাল,দুধ, ডিম, দই।
২. কার্বোহাইড্রেটস
  • খাবার: ব্রাউন রাইস, গোটা শস্যের রুটি, সবজি।
  • কখন: সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, এবং ব্যায়ামের পর।
  • কিভাবে: স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট বেছে নিন এবং সুষমভাবে ভাগ করুন। দুপুরের খাবারে ব্রাউন রাইস খেতে পারেন।
৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি
  • খাবার: আভোকাডো, বাদাম, তেল (অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল), সীফুড।
  • কখন: প্রতিদিন, খাবারের সাথে খান। 
  • কিভাবে: সালাদে অলিভ অয়েল খেতে পারেন, হালকা খাবার হিসেবে বাদাম খান।
৪. ভিটামিন ও মিনারেলস
  • খাবার: তাজা ফলমূল (আপেল, কলা, বেরি), শাক-সবজি (ব্রোকলি, পালং শাক), গাজর।
  • কখন: প্রতিদিন, বিভিন্ন সময়ে।
  • কিভাবে: প্রতিদিন খাবারের সাথে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সালাদ বা স্মুদি হিসেবে খেতে পারেন।
৫. হাইড্রেশন 
  • খাবার: পানি, কাঁকড়ার রস, হার্বাল চা।
  • কখন: সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
  • কিভাবে: প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। ব্যায়ামের আগে, পরে এবং দিনে নিয়মিত পানি পান করুন। এটি না করলে আপনার কীডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
৬. ক্যালোরি ও শক্তি প্রদানকারী খাবার
  • খাবার: মিষ্টি আলু, কুইনোয়া, চিয়া সিড।
  • কখন: দুপুরের খাবার এবং ব্যায়ামের পর।
  • কিভাবে: দুপুরের খাবারে বা ব্যায়ামের পর শক্তি পুনরায় নিয়ে আনতে এসব খাবার খান।
টিপস:
  • নিয়মিত খাবার: ৩টি মূল খাবার এবং ২-৩ টি স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
  • সুষম খাদ্য: প্রতিটি খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এবং চর্বিযুক্ত খাবার খান। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ: খাদ্যের পরিমাণ শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী মেনে খাবেন। 

এই নিয়মগুলি অনুসরণ করলে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাবেন এবং শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করবে। আর এগুলো করতে হবে আমাদের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী। যাতে আমাদের শরীরের কোনো প্রকার ক্ষতি না হয়। অবশ্যই আমরা সেদিকে খেয়াল রাখবো। 

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল এর মধ্যে অন্যতম হলো পানি  পান করা। আমাদের মানব শরীরে প্রায় ৭৫% থেকে ৮০% পানি থাকে। যেটা বয়সভিত্তিক কম বেশি হয়। আর এই পানি মানব শরীরে গড়ে ৬৫% হয়ে থাকে। তাই আমরা ধারনা করতে পারি আমাদের জীবনে এই পানির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। তাই আমাদের শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিৎ। 

পানি আমাদের শরীরের অনেক কাজে সাহায্য করে থাকে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কজের কথা উল্লেখ করা হলোঃ
১। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
২। বিপাকক্রিয়া
৩। কিডনি ও মূত্রাশয় স্বাস্থ্যে সহায়তা
৪। হজমে সহায়তা
৫। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য
৬। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা
শারীরের জন্য আমাদের কতটুক পানি পান করতে হবে সেটা নির্ভর করে আমাদের  স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর। অর্থাৎ আমাদের যার শারীরিক অবস্থা যেমন তাকে সেই পরিমাণ পানি করতে হবে। তবে সাধারনভাবে দৈনিক আমাদের ২ লিটার বা ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরী। তবে শারীরিক কার্যক্রম, আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস ও ব্যক্তিগত স্বাস্থের উপর ভিত্তি করে এর পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি করা যেতে পারে। 

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখাতে আমাদের পানি পান করার সময় কোনটা? অবশ্যই আমাদের সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আমরা কখন এবং কীভাবে পানি পান করতে পারি সেটি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ 
  • সকালে উঠে: দিনের শুরুতে এক গ্লাস পানি পান করা উচিৎ। যা আমাদের শরীরে জলশূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে।
  • খাবার আগে: খাবারের আগে পানি পান করলে হজমে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমাতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীরে সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।
  • খাবারের সময়: খাবারের সময় পানি পান করলে খাবার হজমে সহায়তা হয়। অর্থাৎ আমরা খাবার খাওয়ার মাঝে অল্প করে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। 
  • ব্যায়ামের সময়: শারীরিক কার্যক্রমের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আমরা আমাদের ক্লান্ত শরীরে পুনরায় এনার্জি ফিরে পাবো। 

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করা

আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্রাম শরীরকে পুনরায় শক্তির সাথে জীবিত করে, মাংসপেশী মেরামত করে, এবং মানসিকভাবে আমাদের সতেজ রাখে।তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে অবশ্যই আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ। তা না হলে আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবো। আর আমাদের ঠিক যতটুক প্রয়োজন ততোটুক বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।

আর শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে আমরা কতটুক বিশ্রাম নিবো বা কতটুক প্রয়োজন তা পুরোটাই নির্ভর করে আমাদের শারীরিক সুস্থতার উপর। আমরা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে আমাদের বেশি পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। কিন্তু একজন সুস্থ-সবল ও প্রাপ্ত বয়স্কদের কোনো ব্যাক্তির দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। যেটা খুবই প্রয়োজনীয়।

আরও পড়ুনঃ জিমেইল পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করনীয় কি?

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করলে আমাদের বেশ অনেকগুলো উপকার হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করলে আমাদের যে বিশেষ উপকারিতাগুলো হয় তা হলোঃ
১। শরীরের পুনরুদ্ধার
২। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
৩।হরমোনের সমতা বজায় রাখা
৪। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা
৫। শক্তি পুনরুদ্ধার
৬। বিপাকীয় ক্রিয়ার সমন্বয়

আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। এই নিয়মিত সময়সূচি আমাদের শরীরের জৈবিক ঘড়িকে স্থিতিশীল রাখে। আর ঘুমানোর জন্য আমাদের অবশ্যই অন্ধকার, শান্ত, এবং ঠাণ্ডা পরিবেশ রাখতে হবে। আর আমাদের ঘুমানোর ঘরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে  বিরত থাকতে হবে। কারন এগুলো অনেক সময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। 

মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য আমাদের অন্যতম অংশ হলো মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা মানসিক চাপ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ দুই দিকের উপরেই  নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যা আমাদের ফিটনেস লক্ষ্যে পৌঁছানোতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আমাদের সবসময় মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। 
নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি এন্ডরফিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে। যা "হ্যাপি হরমোন" নামে পরিচিত এবং এটি মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর চাইলে প্রতিদিন ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। শ্বাসপ্রশ্বাস এর মাধ্যমেও চাপমুক্ত থাকা সম্ভব।

মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নিন। এর ফলে কোনো কাজ করার সময় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং চাপমুক্ত থাকা সহজ হবে। আর কাজ করার সময় কাজগুলো পরিকল্পনা করে করবেন। তাহলে কাজ সময় মতো শেষ করে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। 

মানসিক চাপমুক্ত থাকতে আপনার পরিবার, বন্ধু বা পরিচিতদের সাথে কিছু সময় কাটানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়া আপনার হবি বা আপনি আনন্দ কাজে নিয়মিত সময় দিন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় কাটানোর অভ্যাস করুন। কারন এরকম শান্তিপূর্ণ কাজও মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে ও মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে সহায়তা করে। 

লক্ষ্য স্থির করা ও সেটা বজায় রাখা

শারীরিক ফিটনেসের জন্য অবশ্যই লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আর সে লক্ষ্য হবে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার উপরে। কারন আপনার শারীরিক ফিটনেস নির্ভর করবে আপনি যখন শুরু করবেন সেই সময়ের শারীরিক অবস্থার উপর। তাই আপনার অবস্থা দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
১. বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ:
  • SMART পদ্ধতি ব্যবহার করুন: আপনার লক্ষ্যগুলো নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক, এবং সময়সীমা নির্ধারিত হওয়া উচিত।
  • উদাহরণস্বরূপঃ "আপনি ৩ মাসের মধ্যে ৫ কেজি ওজন কমাবেন" যা একটি বাস্তবসম্মত এবং পরিমাপযোগ্য লক্ষ্য হতে পারে।
২. দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ:
  • দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য স্থির করার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
  • উদাহরণস্বরূপঃ যদি আপনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ৬ মাসে ১০ কেজি ওজন কমানো হয়, তাহলে প্রতি মাসে ১-২ কেজি কমানোর স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। 
৩. পরিকল্পনা তৈরি:
  • নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন যা আপনার লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।
  • উদাহরণস্বরূপঃ "প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট হাঁটবেন" বা "প্রতি সপ্তাহে তিনবার জিমে যাবেন"।
৪. অগ্রগতি নিরীক্ষণ করুন:
  • আপনার অগ্রগতি পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করুন। আপনার ওজন, শরীরের মাপ, বা ব্যায়াম করার ক্ষমতা পরিমাপ করুন এবং তা নিয়মিত লক্ষ্য রাখুন।
  • অগ্রগতি দেখলে আপনি আরও অনুপ্রাণিত হবেন এবং কোনও সমস্যা দেখলে তা ঠিক করার সুযোগ পাবেন।
৫. মোটিভেশন এবং উৎসাহ বজায় রাখুন:
  • আপনার সফলতার জন্য নিজেকে কোনোভাবে পুরস্কৃত করুন। ছোট ছোট সফলতাগুলো উদযাপন করা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। 
  • প্রয়োজন হলে ফিটনেস ট্রেনারের সাহায্য নিন। তারা আপনাকে মোটিভেটে করতে সাহায্য করতে পারে। 
৬. চাপমুক্ত থাকা এবং ধৈর্য ধারণ করা:
  • লক্ষ্য অর্জনের পথে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে।
  • কখনো কখনো ফলাফল দেখার জন্য সময় লাগতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

শেষ মন্তব্য

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই আলোচনা করেছি। আমরা অনেকেই আমাদের শারীরিক ফিটনেস নিয়ে চিন্তিত। উপরে সেই চিন্তা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি সে বিষয়েই বলা হয়েছে। আপনি যদি এইরকম চিন্তিত হন তাহলে উপরের মাধ্যমগুলো অবলম্বন করতে পারেন।

আশা করি আপনারা শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশলগুলো জেনে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি এইরকম ইনফরমেটিভ পোস্ট বা আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী হন তাহলে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পাররেন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম এম আই ২২ আইটি ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url